সিলেটে মাউন্ট এডোরা হসপিটালে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে করোনা রোগীদের জন্য ‘প্লাজমা থেরাপি’ কার্যক্রম। সিলেটে এ কার্যক্রম প্রথম শুরু করলো বেসরকারিভাবে করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেয়া এই হাসপাতালটি। গতকাল শনিবার (১৩ জুন) প্রথমবারের মতো তাদের কাছ থেকে রক্তের প্লাজমা সংগ্রহ করে সিলেটের অন্য একটি প্রাইভে হাসপাতাল।

জানা গেছে, সিলেট মহানগরের আখালিয়াস্থ মাইন্ট এডোরা হসপিটালের ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগে গতকাল করোনাজয়ী একজনের কাছ থেকে প্লাজমা সংগ্রহ করা হয়। পরে সেই প্লাজমা প্রয়োগ করা হয় নর্থ ইস্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধিন এক করোনা রোগীর শরীরে। আজও একজন ডোনারের দেয়া প্লাজমা নিয়ে যাবে নর্থ ইস্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সিলেটভিউ-কে আজ রোববার (১৪ জুন) দুপুরে বিষয়টি  নিশ্চিত করেছেন মাউন্ট এডোরা হসপিটালের মার্কেটিং অ্যাডভাইজার মোহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, এই হাসপাতালে প্রাথমিকভাবে গতকাল করোনা থেকে সেরে উঠা একজনের শরীর থেকে রক্তের প্লাজমা সংগ্রহ করা হয় এবং সেই প্লাজমা নর্থ ইস্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধিন করোনা আক্রান্ত একজনের শরীরে প্রয়োগ করা হয়। আজ নর্থ ইস্ট হাসপাতাল আরেকটি প্লাজমা আমাদের কাছ থেকে নেবে। আজকেরটি সেখানে চিকিৎসাধিন করোনা পজেটিভ এক চিকিৎসকের শরীরে প্রয়োগ করা হবে।

রাশেদুল ইসলাম বলেন, আমাদের কাছ থেকে তারা শুধু এই প্লাজমাটাই নেয়, প্রয়োগ করা হয় নর্থ ইস্টে।

এখন থেকে প্লাজমা থেরাপির জন্য আর কাউকে ঢাকা কিংবা অন্যত্র যেতে হবে না উল্লেখ করে রাশেদুল ইসলাম বলেন, গতকাল থেকে মাউন্ট এডোরা হসপিটাল এই সেবাটি চালু করেছে। এখন আর এর জন্য রোগীকে কষ্ট করে ঢাকা বা অন্যত্র দৌঁড়াতে হবে না।

তিনি বলেন, আমরা ৫ মাস আগে প্রায় ৪৫ লাখ টাকা খরচ করে অন্য একটি রোগের রোগীকে থেরাপি দেয়ার  জন্য এই মেশিন স্থাপন করি।  মেশিনটি আপডেট হওয়ায় সেটি এখন করোনা রোগীদের সেবায় কাজে লাগানো হচ্ছে।

এর আগে গত ৮ জুন থেকে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য আলাদা আইসোলেশন ওয়ার্ড চালু করে আখালিয়াস্থ মাউন্ট এডোরা হসপিটাল। প্রথম ধাপে হাসপাতালটি ৪০টি বেড নিয়ে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা প্রদান শুরু করে। করোনাক্রান্ত রোগীদের জন্য আলাদা আইসোলেশন ওয়ার্ড ও আইসিইউ ইউনিট গঠন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেদের ব্যবস্থাপনায়ই করোনা রোগীদের দিতে শুরু করেছে চিকিৎসাসেবা।

হাসপাতালটির করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে বর্তমানে ৪০টি বেড রয়েছে। এছাড়াও গুরুতর রোগীদের জন্য আলাদা ৪ বেডের আইসিইউ ইউনিট রাখা হয়েছে।

রাশেদুল ইসলাম, আজ (১৪ জুন) পর্যন্ত হাসাপাতালটি মোট ১৮ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। তবে এদের শরীরে করোনার উপসর্গ থাকলেও কেউ পজেটিভ নন।

উল্লেখ্র, চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্লাজমা থেরাপি বেশ পুরোনো একটি পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে সাধারণত কোন ভাইরাল সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠা মানুষের রক্ত সংগ্রহ করা হয়। এরপর সেই রক্ত সঞ্চালিত করা হয় একই ধরনের ভাইরাল সংক্রমণের শিকার রোগীর দেহে।

জানা গেছে, মানুষের রক্তের জলীয় অংশকে বলা হয় প্লাজমা বা রক্তরস। রক্তের মধ্যে প্রায় ৫৫ ভাগই থাকে হলুদাভ রঙের এই প্লাজমা। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পরে যারা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেছেন, তাদের শরীরে এক ধরণের অ্যান্টিবডি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার তৈরি হয়।

তাদের শরীর থেকে প্লাজমার মাধ্যমে সংগ্রহ করা এই অ্যান্টিবডি যদি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোন ব্যক্তির শরীরে প্রয়োগ করা হয়, তখন তার শরীরের সেই অ্যান্টিবডি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। তখন তিনিও সুস্থ হয়ে ওঠেন।

চিকিৎসকরা এভাবেই করোনাজয়ী একজনের শরীর থেকে প্লাজমা বা রক্তরস সংগ্রহ করে করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে প্রয়োগ করবেন। ফলে তার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হবে।

সংবাদ সৌজন্যে-সিলেটভিউ২৪ডটকম

বিয়ানীবাজারে নতুন ভাইরাসে আক্রান্ত গরু,চিন্তায় কৃষক